এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের সাধন চন্দ্র সুশীল হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িত দুই ঘাতককে গ্রেপ্তার এবং ঘটনার নেপথ্য ক্লু উৎঘাটনে সফল হয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও চকরিয়া থানার এসআই (উপ-পরিদর্শক) কাওছার উদ্দিন চৌধুরী।

চলতি মে মাসের ৯ তারিখ রাতে উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের পাশের মরিচ খেত থেকে উদ্ধার করা অজ্ঞাতনামা লাশটির পরিচয় সনাক্ত নিয়ে যখন থানা পুলিশ নানা দোলাচলে নিমজ্জিত তখনই কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেনের নির্দেশে সহকারি পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মতিউল ইসলাম ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী সিদ্বান্তক্রমে মামলাটির তদন্তের দায়িত্বভার ন্যাস্ত করেন মাত্র পাঁচমাস আগে চকরিয়া থানায় যোগ দেয়া চৌকষ পুলিশ কর্মকর্তা কাওছার চৌধুরীকে।

অবশেষে সিনিয়র কর্মকর্তাদের দিকনির্শেনায় পুলিশ কর্মকর্তা কাওছার উদ্দিন চৌধুরী মামলাটির তদন্তের শুরুতে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। শুরুতে তিনি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেন ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির এক নারীকে। এরপর তার কাছ থেকে উদ্ধার করেন বেশ কিছু গুরুত্বপুর্ণ তথ্য। এরপর পর্যায়ক্রমে বেরিয়ে আসতে শুরু করে ঘটনার নেপথ্য কারণ এবং জড়িত কিলারদের পরিচয়।

জানতে চাইলে সফল পুলিশ কর্মকর্তা এসআই কাওছার চৌধুরী বলেন, সাধন চন্দ্র সুশীল হত্যা মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে এক নারীকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেফতার করি ঘটনায় সরাসরি জড়িত কিলার চক্রের সদস্য সাহারবিল ইউনিয়নের মাইজঘোনাস্থ জলদাশ পাড়া গ্রামের গুনহরী জলদাশের ছেলে বিরট জলদাশকে। থানা হেফাজতে নেয়ার পর বিরট জলদাশ ঘটনার ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা দেন। তার স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি ১৫১ ধারায় রেকর্ড করা হয়। এরপর রিবট জলদাশের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৩ মে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া সিরাজুল মোস্তাফা জামালকে। মোস্তাফা জামাল উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের পশ্চিম মাইজঘোনা গ্রামের আবুল ফজলের ছেলে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিরাজুল মোস্তাফা অকপটে খোলাসা করেন সাধন চন্দ্র সুশীল হত্যাকান্ডের পুরো বিষয়টি। এরপর সে আদালতে স্বেচ্ছায় ঘটনার ব্যাপারে জবানবন্দি দিতে রাজি হন। এরই প্রেক্ষিতে ১৬ মে বিকালে গ্রেফতারকৃত সিরাজুল মোস্তাফাকে চকরিয়া উপজেলা সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে তিনি (আসামি সিরাজুল) আদালতের কাছে হত্যাকান্ডের বিষয়টি স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। একই সাথে আদালতে সংগঠিত হত্যাকান্ডের সাথে অন্য যাঁরা জড়িত তাদের পরিচয় সনাক্ত করেন। পরে আদালতের বিচারক তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

এসআই কাওছার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, লাশটি উদ্ধারের পর থানায় মামলা হলেও এজাহারে কোন আসামির নাম ছিলনা। এমনকি মুখমন্ডল বিকৃত হওয়ার কারনে ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকার কেউ লাশের পরিচয় সনাক্ত করতে পারেনি। এ অবস্থায় ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি কক্সবাজার আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হয়। তিনি বলেন, ঘটনার চারদিন পর ১৩ মে নিহতের ছেলে নবম শ্রেনীতে পড়–য়া শিক্ষার্থী শান্ত কুমার সুশীল চকরিয়া থানায় উপস্থিত হয়ে নিহত ব্যক্তি তাঁর বাবা সাধন চন্দ্র সুশীল বলে সনাক্ত করেন। এরপর থেকে মুলত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি নতুনভাবে মোড় নিতে শুরু করে।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে পুলিশ বাহিনীতে এসআই পদে যোগদান করেন চৌকস পুািলশ কর্মকর্তা কাওছার উদ্দিন চৌধুরী। ২৩ বছরের পেশাগত জীবনে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাকুরী করে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ইতোমধ্যে সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার, খুলনা মেট্টোপলিটন পুলিশ, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানা, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালী, ডবলমুড়িং, পাচলাইশ, বন্দর, ইপিজেট থানা ও লক্ষৗপুর জেলার চন্দ্রগাও থানা। সর্বশেষ ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে যোগদান করেছেন চকরিয়া থানায়।

সফল পুলিশ কর্মকর্তা কাওছার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যোগদানের পাঁচমাস সময়ে তিনি চকরিয়া উপজেলার দুর্গম এলাকায় অভিযান ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছেন ডাকাতি, হত্যা, দুস্যতা, অস্ত্র মামলার অন্তত শতাধিক আসামি। তাদের মধ্যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ও ১১ বছর এবং পাঁচবছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামিও রয়েছে। তিনি বলেন, একই সময়ে উদ্ধার করা হয়েছে আটটি দেশীয় তৈরী বন্দুক ও বিপুল পরিমাণ কার্তুজ।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, নিহত সাধন চন্দ্র সুশীলের লাশটি উদ্ধারের পর প্রথমে পরিচয় সনাক্ত করা নিয়ে এক ধরণের জটিলতা সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে সহকারি পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মতিউল ইসলামের পরামর্শে থানায় দায়ের করা হত্যা মামলাটির তদন্তের জন্য এসআই কাওছার চৌধুরীকে দেয়া হয়। তিনি মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করলে আমরা (এএসপি ও ওসি) তাকে সহযোগিতা করি।

ওসি বলেন, তদন্তের মাধ্যমে মাত্র সাতদিনের ভেতর আলোকিতভাবে এ হত্যাকান্ডের ক্লু উৎঘাটন এবং ঘটনায় জড়িত কিলারদের মধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন এসআই কাওছার চৌধুরী। ঘটনার কারণ এবং কিলারদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বর্তমানে পুলিশের একাধিক টিম সাধন সুশীল হত্যাকান্ডে জড়িত অপরাপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযানে রয়েছে।